এখানে
শুধু ঘুরতে
নয়, অ্যাডভেঞ্চার
করার মন-মানসিকতা থাকলে
তবেই যাওয়া
ভালো।
বান্দরবানের
থেকে দিনের
শেষ বাস
ধরে রওনা
হলাম থানচির
পথে। পূর্ণিমা
ভরা রাত।
পাহাড়ি রাস্তায়
চলেছে থানচির
মিনি বাস।
শীতের দিনের
শেষ ভাগ।
পাহাড়ের কোল
জুড়ে কুয়াশার
বিছানা। দেখতে
দেখতে পেরিয়ে
যাচ্ছে একের
পর এক
উঁচু সব
পাহাড়।
থানচি বাংলাদেশের অন্যতম
উঁচু সড়কপথ।
চলতে চলতে
বাসের জানালা
দিয়েই চোখে
পড়ে পাহাড়ের
পশ্চিম দিগন্তের
সোনালি সূর্যের
বিদায়! তখনও
দিনের কিছু
আলো পাহাড়ের
বিস্তৃত আকাশে
ঘোরাফেরা করছে।
দিন শেষের
আগেই বাসের
যাত্রা বিরতি।
গোধূলি বেলায় বাস
থেকে নেমে
গরম চায়ে
চুমক দিয়ে
আবার যাত্রা
শুরু। পথ
চলতে চলতে
হঠাৎ
চোখে পড়ল
পাহাড়জুড়ে নেমেছে জোছনার দল। যতদূর
চোখ যায়
কেবল পাহাড়ের
বিস্তীর্ণ মানচিত্র।
ধবধবে
জোছনার আলোয়
আলোকিত গোটা
পাহাড়ি জনপদ।
পূর্ণিমায় পাহাড়ের এমন চিত্র কল্পনার
রংও ছাড়িয়ে
যায়। হাজারও
তারার দল
সবুজ পাহাড়ের
আকাশজুড়ে, নিচের পৃথিবীতে শুধু জেগে
আছে শতশত
পাহাড়ের ভাজ,
উপত্যকা, অরণ্যভুমি,
খরস্রোতা নদী,
ছোট-বড়
ঝরনা, জুমের
ক্ষেত, ফুল-পাখি।
বিস্তৃত অরণ্যভূমিতে জেগে
থাকা হাজারও
অচেনার সৌর্ন্দয্যের
পথ পেরিয়ে
থানচি বাজার
পৌঁছতে পৌঁছতে
রাত ৮টা।
আগেই থেকে থানচির
সাঙ্গু নদীর
পাড়ে দাঁড়িয়ে
ছিল রেমাক্রির
সরকারি স্কুলের
শিক্ষক জয়
মারমা। রাতে
থাকার ব্যবস্থা
জয়দের বাসায়।
থানচির সাঙ্গু
নদীর পাড়ে
এমন একটা
পাহাড়ি ঘরে
থাকার ইচ্ছাটা
এবার পূর্ণ
হল। সাঙ্গু
নদীর তাজা
কাতাল মাছ
দিয়ে রাতের
ভোজন পবর্টা
সেরে নিলাম
বাজারের পাহাড়িকা
হোটেলে। আহ!
সে কি
স্বাদ!
ভোরের থানচি। চারপাশে
কুয়াশা। দীর্ঘ
পথ ট্র্যাক
করতে হবে,
তাই ভোরেই
রওনা হলাম।
এবারের গন্তব্য
দেশের অন্যতম
শীর্ষ পাহাড়
চূড়া তাজিংডং
(সরকার স্বীকৃত
বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়)।
ভোরের আলোয় যাত্রা
পথে শীতের
দিনে পাহাড়ের
সবুজ রং
হারানো কুয়াশার
মোড়ানো পথ
বেশ উপভোগ্য।
উঁচুনিচু পাহাড়ি
পথ, পথে
পথে ছোট
জুম ঘর।
পাহাড়ের চূড়া
বেয়ে নামছে
সকালের নির্মল
সোনালি সূর্যেরের
প্রথম রশ্মি।
পথ চলতে চলতে
পাহাড়ের উপর
থেকে চোখে
পড়ে বোডিং
পাড়া। থানচি
থেকে রওনা
হয়ে প্রথম
পাড়ার দেখা
পেলাম। পাহাড়ের
বুকে গড়ে
উঠেছে ঝিরি
পাড়ের এই
বোডিং পাড়া।
ম্রো আদিবাসীদের
বসবাস এই
পাড়ায়। ঝিরির
ঠাণ্ডা জলের
পরশ নিয়ে
কিছুক্ষণ পরেই
যাত্রার করলাম
তাজিংডংযের পথে।
বোডিং
পাড়ার দীর্ঘ
খাড়া পাহাড়
পেরিয়ে যেতে
এই পাহাড়ের
উচ্চতা দেখেই
চোখ কপালে
উঠল। শীতের
দিনে পথে
তেমন জোক
বা বৃষ্টির
উৎপাত
নেই। তবে
ক্রমাগত উতপ্ত
হয়ে ওঠা
দিনের সূর্য,
হাঁটার গতিকে
কমিয়ে দিয়েছে
ক্রমাগত। ভোরের
কুয়াশা সকালের
কিরণ, ভর
দুপুরের প্রচণ্ড
গরম এসব
নিয়েই পথ
চলছি উঁচুনিচু
পাহাড়ের সরু
পথ বেয়ে।
জুম ক্ষেতের পথ
পেরিয়ে কখনও
ঝিরি, ক্যাসকেড
বেয়ে আসা
ঠাণ্ডা জলের
স্রোত, বুনো
পথের ট্রেইল
এসব পায়ে
ঠেলে পথ
চলেছি তাজিংডংয়ের
পথে। দুপুরের
শেষ দিকে
পৌঁছে যাই
শেরকর পাড়ায়।
বলা যায়
এটি তাজিংডংয়ের
বেইস ক্যাম্প।
পাড়ায় বম
আদিবাসীদের বসবাস।
পাড়ায় ঢুকতেই কথা
হয় কারবারি
সঙ্গে। ভর
দুপুরে কিছুটা
বিশ্রাম নিয়েই
আবার যাত্রা
শুরু। শেরকর
পাড়া থেকে
তাজিংডং দুই
ঘণ্টা সময়
লাগে। তবে
পুরোটা পথ
উঠতে হবে।
মানে ‘আপ
হিল’।
দুপুরের শেষ দিকে
পা বাড়ালাম
তাজিংডংয়ের পথে। বুনো পথে ছড়ানো
সৌর্ন্দয্যের মালা। কোথাও কোথাও বুনো
ফুলের দল,
চেনা-অচেনা
কীটপতঙ্গ, কান ভারি করা পাহাড়ি
পোকার তীব্র
শব্দ। এসব
দেখতেই দেখতেই
পা ফেলছি।
এমন কষ্টকর
পথ যেন
শেষই হয়
না। তীব্র
গরমে প্রায়ই
গলা শুকিয়ে
যাচ্ছিল। পুরোটা
পথে আমাদের
চেনা সভ্যতার
কোনো চিহ্ন
মাত্র নেই।
পথ চলতে চলতে
একসময় কিছুটা
দূর থেকে
চোখে প্রায়
সারি করা
তিনটি চূড়া,
সবোর্চ্চটা দেখে বুঝা যাচ্ছিল, নর্থ
চূড়া বলেই
ট্রেকারদের কাছে পরিচিত, এটি তাজিংডংয়ের
সেন্ট্রাল চূড়া থেকেও উঁচু। ক্লান্ত
শরীর ভেঙে
উঠছি নর্থ
পিকের চূড়ায়।
চূড়ায় উঠে মনের
দীর্ঘশ্বাসটা যেন একটা সার্থকতা খুঁজে
পায়। সবোর্চ্চ
চূড়া থেকে
নিচের পাহাড়ি
খাঁজ, জুমক্ষেত,
চোখ সীমানায়
বন্দি হওয়া
পাহাড়ি পাড়া
সবকিছুকে তুচ্ছ
মনে হয়।
চূড়ায়
দাঁড়িয়ে কেবল
মনে হচ্ছিল—
পাহাড়কে কখনও
জয় করা
যায় না,
শ্রদ্ধায় অবনত
হতে হয়।
তাজিংডংয়ের চূড়া দূর আকাশের গায়ে
হেলান দেওয়া
পাহাড় আর
মেঘমল্লার দল দেখে মনে হয়
এই বিস্তৃত
অরণ্যভূমি পেরোলেই যেন ধরা দিবে
নতুন কোনো
স্বপ্ন।
প্রয়োজনীয়
তথ্য: বছরের যেকোনো
সময় তাজিংডং
ঘুরে আসতে
পারেন। বর্ষায়
সবচেয়ে সুন্দর।
তবে এই
সময় পাহাড়ে
প্রচুর বৃষ্টিপাত
হয় বলে
ট্র্যাকিং করা বেশ কষ্টকর।
বান্দরবানের
থানচি বাস
স্টেশন থেকে
প্রতিদিন বাস
ছাড়ে থানচির
পথে। তাছাড়া
রিজার্ভ চান্দের
গাড়িতে থানচি
পৌঁছানো যাবে।
থানচি থেকে
বোডিং পাড়া,
শেরকর পাড়া
হয়ে তাজিংডং
পৌঁছানো যায়।
শেরকর পাড়ায়
রাতযাপন করতে
হবে। তাবু
নিলে গেলে
তাতেও রাত
কাটানো যায়।
খেয়াল
করবেন: ট্র্যাকিংয়ের প্রস্ততি
নিয়ে যেতে
হবে। পাহাড়ি
পথে হাঁটার
জন্য জুম-জুতা অথবা
ট্রেকিং সু
নিতে পারেন।
বান্দরবান বা থানচি বাজারে জুম-জুতা পাওয়া
যায়।
অবশ্যই ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক
নিতে হবে।
মশারোধী ক্রীম,
গামছা, ছুরি,
স্যালাইন, শুকনাখাবার এসব নেওয়া জরুরি।
প্রকৃতি রক্ষা
করতে হবে
সবার আগে।
তাই পাহাড়ি
ট্রেইলে কোনো
প্ল্যাস্টিক বা অপচনশীল কিছু ফেলবেন
না।
0 comments:
Post a Comment